জেলায় ছয় মাসে ২৭৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার
ইয়ারব হোসেন : জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যৌতুকের বলি হচ্ছে অনেক গৃহবধূ। এসিড সন্ত্রাস, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অনেক নারী।
জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে জেলার সাতটি উপজেলায় ২৭৫টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ২৫টি, অপহরণ ২০টি, শিশু নির্যাতন ১৪টি, এসিড সন্ত্রাস ৩টি ও অন্যান্যভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৮২টি।
এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১টি, মার্চ মাসে ৮টি, এপ্রিল মাসে ৫টি ও মে মাসে ৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
অপহরণের ঘটনা ঘটেছে জানুয়ারি মাসে ২টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩টি, মার্চ মাসে ৩টি, এপ্রিল মাসে ৫টি ও মে মাসে ৫টি।
মার্চ মাসে ২ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এপ্রিল মাসে ৫ জন ও মে মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬ শিশু।
অন্যান্যভাবে নির্যাতনের শিকার নারীর সংখ্যা জানুয়ারি মাসে ২১ জন, ফেব্রয়ারি মাসে ৩১ জন, মার্চ মাসে ২৯ জন, এপ্রিল মাসে ৩৩ জন, মে মাসে ৫৫ জন ও জুন মাসে ৫০ জন।
সূত্র জানায়, জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের মেধাবি ছাত্রী মাশহুদা খাতুনকে তার স্বামী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। যৌতুকের দাবিতে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্বামী, শ্বাশুড়ি ও শ্বশুর মিলে গৃহবধূ মর্জিনা খাতুনকে হত্যা করেছে। সারাদেশে এ দুটি হত্যাকাণ্ড ব্যাপক আলোড়ন তোলে। তবে এ দুটি ঘটনার প্রতিবাদে কোন মানবাধিকার সংগঠনকে মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকায় প্রেস রিলিজও দিতে দেখা যায়নি।
সদর উপজেলার হাড়দ্দা গ্রামের মর্জিনা খাতুন জানান, প্রায় তিন মাস আগে তার মেয়ের সাথে হাড়দ্দা গ্রামের ইসরাইল গাজীর ছেলে ইব্রাহিম গাজীর বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন পার হতে না হতেই এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তার মেয়ের উপর নির্যাতন শুরু হয়। জামাই ইব্রাহিম, তার পিতা ইসরাইল গাজী ও তার মা মিলি খাতুন মিলে প্রায় তাকে নির্যাতন করতো। গত ৩ মে যৌতুক বাবদ নগদ এক লাখ টাকা অথবা একটি মোটর সাইকেল আনতে বলে তার মেয়েকে। যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে তার মেয়ের উপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় নির্যাতন। তার মেয়েরে চোখ উপড়ে ফেলে গুপ্ত অঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসী শহরে মিছিল ও থানা ঘেরাও করে।
সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের হাছান খানপুরির মেয়ে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মাশহুদা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় খুলনা উপজেলার পাইকগাছা গ্রামের মহিউদ্দীনের ছেলে রুহুল কুদ্দুসের (২৩)। তারা দু’জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতো। বিয়ের পর থেকে মাসুদা ও তার স্বামীর মধ্যে কলহ চলে আসছিল। ২২ জুন ভোরে কুদ্দুস তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ওই ঘরের তালা দিয়ে সদর থানায় এসে স্বেচ্ছায় আত্মসমার্পণ করে। এ হত্যাকাণ্ডটি সাতক্ষীরা জেলাসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় এ জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেশি। গ্রামের কিছু মানুষ নারী নির্যাতনের ধারা কঠোর হওয়ায়, এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।
আবার অনেকে থানায় মামলা করতে না পেরে আদালতে মামলা করে। আদালত থেকে সরাসরি তাদের মামলা রেকর্ড করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ কারণে নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা বেড়ে যাচেছ। তবে এখন থেকে প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নারী নির্যাতন মামলা নেওয়ার ব্যাপারে সর্তক হওয়ার জন্য। এ ছাড়া কেউ মিথ্যা মামলা করেছে, এমন প্রমাণ হলে ওই বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।