ইলিয়াস হোসেন, তালা (সদর): তালা উপজেলার ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩৩ জন ডাক্তারের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১০ জন ডাক্তার। বাকী ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। দিনের পর দিন পদগুলো খালি থাকলেও তাতে বসার লোক নেই। বসানোর ব্যবস্থাও হচ্ছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জনপদের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ।
সরেজমিনে ক্লিনিক ঘুরে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তালা উপজেলায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হচ্ছে. ধানদিয়া, মানিকহার, মিঠাবাড়ি, আসাননগর, যুগিপুকুরিয়া, কাশিপুর, সরুলিয়া, তৈলকুপি, জুসখোলা, মেলেকবাড়ি, মাহমুদপুর, জগদানন্দকাটি, শিরাশুনি, তেরছি, কলিয়া, কাজিডাঙ্গা, উথুলি, মাদরা, বারুইহাটি, চোমরখালি, বয়ার ডাঙ্গা, কৃষ্ণনগর, রাজাপুর, হরিহরনগর, শাহাজাতপুর, কৃষ্ণকাটি, জালালপুর, দোহার, মহান্দি, হাজরাকাটি, নলতা, মাছিয়াড়া, জেয়ালা, আটারই, ডাঙ্গানলতা ও খানপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।
সূত্র জানায়, এসব ক্লিনিকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে নিয়োজিত রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব ক্লিনিক থেকে সর্ব সাধারণ প্রতিনিয়ত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পাশাপাশি সীমিত আকারে ঔষধ ও দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতি দুই মাস অন্তর ২৯ প্রকার ঔষধের একটি কাটুন সরবরাহ করে সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মনে করেন, এটাই যথেষ্ট। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রাপ্ত ঔষধ গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবার জন্য যথেষ্ট নয়। শিশুদের ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগের জন্য ইতোপূর্বে ইরিথ্রমাইসিন নামক একটি সিরাপ সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে সেটির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানায় সূত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। কিন্তু কাউকে ২ দিনের বেশি ঔষধ দেয়া হয় না। প্রতিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার করে একজন ডাক্তার যেয়ে সেবা দেয়ার কথা থাকলেও মাসে একবারও তা সম্ভব হচ্ছে না।
ডাঙ্গা নলতা কমিউনিটি ক্লিনিকে কানের সমস্যা নিয়ে আসা মমতাজ বেগম বলেন, আমি এসেছি কানের সমস্যা নিয়ে। কিন্তু ডাক্তার নেই। নার্স দু’রকম ঔষধ লিখে দিয়ে বলেছেন, এতে যদি যন্ত্রণা কম না হয় তবে তালা অথবা সাতক্ষীরা যেতে হবে। ডাক্তার থাকলে হয়তো এ ভোগান্তি হতো না বলে মনে করেন মমতাজ বেগম।
চোমরখালি কমিউনিটি ক্লিনিকে কথা হয় একজন রোগীর সাথে। নাম প্রকাশ করলে ঝামেলা হতে পারে এমন আশংকা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। রোগ ব্যায়রাম লেগেই আছে। যা আয় করি তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। ঔষধ কেনবো কোথা থেকে। ক্লিনিকে এসেছি ঔষধ নিতে। কিন্তু ডাক্তার নেই। নার্স আপা আছে। কিন্তু রোগের কথা শুনে কার কাছে ফোন করে ওষুধ লিখে দিয়েছে। রোগ সারবে কী না জানি না।
আরো কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডাক্তাররা লিখে দিয়েছেন ৩০ দিনের ঔষধ। কিন্তু সরবরাহ করেছেন ২ দিনের। বাকী ২৮ দিন কীভাবে চলবে? এ প্রশ্ন করেন তারা।
তবে অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফলের কথাও বলেছেন। সরুলিয়া এলাকার সুফিয়া খাতুন ও জোহরা বেগম বলেন, ৪/৫ বছর আমরা ভালো আছি। সর্দি-কাশি যাই হোক ছুটে আসি ক্লিনিকে। কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে এসব ক্লিনিকগুলোতে গরু-ছাগল ঘাস খাওয়াতাম। ক্লিনিকগুলো জোট সরকার বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সর্বনাশ করেছিলো। বর্তমান হাসিনার সরকার যা করছে আমাদের ভালোর জন্য করছে। কোন ডাক্তার আসলো আর গেলো? তা দেখার দায়িত্ব ও সেবা আদায় করে নিতে আমরা ব্যর্থ। এ ব্যাপারে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম জাহিরুল হাসান জনান, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৩ জন্য ডাক্তারের পদ থাকলেও বর্তমান ২৩টি পদ খালি থাকায় আমাদের পক্ষে প্রতি সপ্তাহে ১ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে যেয়ে সেবা দেওয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিদুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে এবং যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না সেখানে সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সাথে এগুলোকে ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ক্লিনিকে ১টি করে ল্যাপটপ সরবরাহ করছে সরকার। যাতে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে।
তিনি বলেন, প্রতি ৬০০ জন মানুষের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের ব্যবস্থা করে সরকার। তবে দিনদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যদি কোন ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার কোন ব্যবস্থা না থাকে এবং সে এলাকার কেউ যদি ৮ শতক জমি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরী করার জন্য দেন তবে সে এলাকায় একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করবে বর্তমান সরকার। বর্তমানে এমন দুটি কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজও তালা উপজেলার মাগুরা ও ধানদিয়া ইউনিয়নে চলামান আছে।