শহীদুল ইসলাম: বর্ণে বর্ণে বর্ণমালা। বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনে যে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো, সেই রাজপথে বর্ণমালার ছড়াছড়ি। শিল্পীর রং তুলির আঁচড়ে নিখুঁত আল্পনা। মনের মাধুরিতে রাজপথ হয়েছে শিল্পীর ছবি আঁকার ক্যানভাস। সাতক্ষীরার সর্বত্র মহান একুশের চেতনাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে রাজপথ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বর্ণে বর্ণে বর্ণমালায় সাজানো হয়। একুশ আমার অহংকার। একুশ আমার গর্ব। একুশের চেতনা, হারিয়ে যেতে দেব না। সালাম, রফিক, জব্বার ভাই, আমরা তোমাদের ভুলি নাই………। এভাবে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত সাতক্ষীরার রাজপথ থেকে শহীদ মিনার। মনের সব আবেগ উজাড় করে দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ভরে যায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনারের বেদি। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানমালা। ২০ ফেব্র“য়ারি বিকেলে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বই মেলা। সুর-ছন্দ-নৃত্য ও আবৃত্তির আবেশে শিল্পীরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন মহান ভাষা সৈনিকদের। অন্যায়-অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান জানান বক্তারা। একুশের চেতনাকে সমুন্নত রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালনের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্র্যমুক্ত সুখি-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার দৃপ্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। স্বাধীনতা বিরোধী ও অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা। প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা ‘বাংলা’কে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়ে প্রমিত উচ্চারণ ও বানানরীতি অনুসরণ করার আহ্বান ছিলো অন্যতম। নৈরাজ্য-নাশকতার বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষ আবদ্ধ হন ঐক্যের বন্ধনে। সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্লোগান, জেগে ওঠার আহ্বান আর বদলে যাওয়ার জয়গানে মুখরিত হয়ে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর।
রাত ১২টা। লোকে লোকারণ্য শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক। লক্ষ প্রাণের মিলনমেলা। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত শহীদ মিনার চত্বর। রাত ১২টা ১ মিনিট। নিস্তব্দ, নির্বাক সবাই। পিনপতন নীরবতা। সে নীরবতা ভেঙ্গে সবাই এক সুরে গাইলেন সেই চিরচেনা অবিনাশী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? ছেলে হারা শত মায়ের অশ্র“ গড়া এ ফেব্র“য়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?……….।’ শোকাবহ পরিবেশে সুরের মূর্ছনা থামতেই শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের প্রথম প্রহর উদযাপন করা হয়। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরার নবনির্মিত শহীদ মিনারের রূপকার ও সাতক্ষীরার সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা পরিষদ, সাতক্ষীরা পৌরসভা, ৭১’ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, দৈনিক পত্রদূত, দৈনিক কালের চিত্র, দৈনিক কাফেলা, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক সমকাল, বার্তা সংস্থা এফএনএস, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস, জেলা বিএনপি, জেলা জাতীয় পার্টি, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি, জেলা জাসদ, জেলা বাসদ, জেলা শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, প্রজন্মলীগ, সৈনিকলীগ, মহিলা লীগ, জেলা যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, জেলা ছাত্রমৈত্রী, জেলা জাতীয় ছাত্রসমাজ, শহীদ আলাউদ্দিন পরিবার, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, সাতক্ষীরা দিবা-নৈশ কলেজ, সাতক্ষীরা কর্মাস কলেজ, সুন্দরবন সায়েন্স এন্ড বিজনেজ কলেজ, পিএন স্কুল এন্ড কলেজ, পলাশপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মর্নিং সান প্রি-ক্যাডেট স্কুল, সাতক্ষীরা প্রি-ক্যাডেট স্কুল, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, এলজিইডি, ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন, সাতক্ষীরা রিপোর্টাস ক্লাব, সাতক্ষীরা উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, লিনেট ফাইন আর্টস, বর্ণমালা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, গণশিল্পী সংস্থা, চেম্বার অব কমার্স, সদর উপজেলা পরিষদ, সাতক্ষীরা সদর থানা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি ব্যাংক, সনাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জেলা মন্দির সমিতি, মহিলা পরিষদ, যুবমৈত্রী, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ট্রাক ট্যাংলরি শ্রমিক ইউনিয়ন, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, আজাদী সংঘ, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলনী পরিষদসহ অর্ধ শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
একুশের প্রথম প্রহরে সাতক্ষীরায় নবনির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে কলকাতা থেকে আসেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক কৃষ্ণা ঘোষ, রুবি গান্ধী, অরবিন্দ ঘোষ, সুখেন্দ্র চৌধুরীসহ কয়েকজন বরেণ্য অতিথি।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তারা মনের আবেগ উজাড় করে প্রকাশ করেন তাদের অভিব্যক্তি।
এতে বাংলাদেশের প্রতি এবং বাংলাভাষার প্রতি তাদের গভীর মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে ওঠে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনসুর আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পৌর মেয়র এমএ জলিল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এনামুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছিম ময়না প্রমুখ।