নিজস্ব প্রতিনিধি: আশাশুনি উপজেলার ৮নং খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিমের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবের শিকার হয়েছেন একই ইউপির মহিলা সদস্য নাসিমা খাতুন। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতনের নির্মম কাহিনী তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি তার পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ডালিমকে গ্রেপ্তারসহ শাস্তির দাবি জানান।
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, ু২০১১ সালের ২৯ মার্চ ইউপি নির্বাচনে জনগণের ভোটে ডালিম চেয়ারম্যান ও আমি সদস্য নির্বাচিত হই। সেখান থেকেই চেয়ারম্যান আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এমনকি বেতন ভাতাদি পর্যন্ত উত্তোলন করতে দেয়নি। নির্বাচিত হয়ে জনগণের দেয়া ওয়াদা ভুলে চেয়ারম্যান ডালিম সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে। অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতিতে চলছে পরিষদ। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে এলাকায় গড়ে তুলেছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দেশি বিদেশি অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র নিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় প্রকাশ্যে মহড়া দেয়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপর হামলা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তার আমলে এলাকায় উন্নয়ন তো দূরের কথা কোথাও এক ঝুড়ি মাটিও পড়েনি। বরাদ্ধ যা এসেছে তা খাতা কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়েই বিল উত্তোলন করা হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার উপর চালানো হয়েছে সন্ত্রাসী হামলা।
সংবাদ সম্মেলনে নাসিমা খাতুন আরও বলেন, গত ২০ মার্চ দুপুরে আশাশুনি কৃষি ব্যাংকে ডালিমের ভাড়াটিয়া ভূয়া অর্ধ শতাধিক লোকজন কর্মসৃজন কর্মসূচির টাকা তুলতে আসে। তারা আদৌ কাজ করেনি। না করেই চেয়ারম্যানের সহায়তায় সরকারি টাকা তুলে লুটপাটের চেষ্টা করে। এসময় ওই স্থানে আমি লোকজন নিয়ে এসে ভূয়া লোক প্রমাণিত করায় টাকা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আর টাকা প্রদান করেনি। ফলে চেয়ারম্যান ডালিমসহ অন্যতম সহযোগী উত্তম কুমার লোকজন নিয়ে ফিরে আসে। ওই রাতেই পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যানের সশস্ত্র ২০/২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী আমার গদাইপুরস্ত বসতবাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ি ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি আমাকে জোরপূর্বক তুলে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। লোহার রডের বাড়িতে আমার বাম হাত ও বাম পা ভেঙ্গে যায়। যা এলাকার অসংখ্য মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। রাতেই স্থানীয়রা আমাকে আশাশুনি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন সাতক্ষীরা সদরে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান ডালিমসহ ১৭ জনকে আসামি করে আশাশুনি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার ১১ দিন হলেও মাত্র একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিরা এলাকায় এবং সাতক্ষীরা শহরে দাফটের সাথে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা কয়েক’শ ভাড়াটিয়া লোকজন সাতক্ষীরায় এনে মানববন্ধন করলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত রয়েছে নীরব ভূমিকায়। তারা কথিত মানববন্ধনের নামে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে সন্ত্রাসী চেয়ারম্যান ও তার সশস্ত্র ক্যাডারদের বাচাঁনোর পায়তারা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমি হাসপাতালে থাকার সুযোগে আমার বাড়িতে থাকা ছাগল, হাস-মুরগি ঘরের ধান, চাউল ও ছোট একটি মৎস্য ঘেরের মাছ চুরি করে নিয়ে গেছে ডালিমের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা। হাফ ডজন মামলার আসামি ডালিম এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এলাকার মানুষ হয়ে পড়েছে নির্বাক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যানের দুর্নীতি নিয়ে এলাকার মানুষ ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তারই নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাদেকুর রহমান ওই বছরের ২৮ ফেব্র“য়ারি ঘটনাস্থলে যান তদন্তের জন্য। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই ঘটনার সাক্ষীরা আসলে ইউনিয়ন পরিষদেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষীদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করে চেয়ারম্যান ডালিম। এ ঘটনায় আশাশুনি থানায় একটি মামলা হয়। বর্তমানে জেলা পরিষদের একটি পুরাতন ব্রিজের সরঞ্জামাদি চুরি করে বিক্রির সময় জনতা হাতে নাতে ধরে জেলা পরিষদের দায়িত্বে জমা রেখেছে। কিন্তু জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সে এলাকায় কায়েম করেছে সন্ত্রাসের রাজত্ব। হারাম করে দিয়েছে এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণের ঘুম।
তিনি তার বাহিনীর সদস্য উত্তম কুমার, আশরাফ হোসেন, সায়ফাল, রাসেল, জামাল হোসেন, হাফিজুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, রব্বানী মোল্যা, ইউসুফ, সিরাজুল সানাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন, তার স্বামী রবিউল ইসলাম, কবি সিরাজুল ইসলাম ও সিদ্দিক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।